হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এবং জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায়
হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এবং জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায় আবিষ্কার করুন যা আপনার দৈনিক সুরক্ষার মূল ভিত্তি। ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ধোয়ার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং কখন কখন হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে তার বিস্তারিত জানুন। দূষিত বস্তু এড়িয়ে চলা হাঁচি কাশির সঠিক
পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা কীভাবে আপনার ভেতরের প্রতিরক্ষা বাড়ায় তা বুঝুন। এই প্রবন্ধে আপনি খাদ্য জল সুরক্ষিত রাখা এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখার কার্যকরী কৌশল পাবেন যা সংক্রমণ রোধে মুখ্য ভূমিকা রাখে। এই সহজ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এখনই পড়ুন।পেজ সূচিপত্রঃ হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এবং জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায়
-
হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এবং জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায়
- জীবাণুমুক্ত থাকতে সঠিক সময় হাত ধোয়া
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত থাকা
-
মুখ চোখ ও নাক স্পর্শ না করে জীবাণুমুক্ত থাকা
-
জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য হাঁচি কাশির সঠিক পদ্ধতি
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
- জীবাণুমুক্ত থাকতে দূষিত বস্তু এড়িয়ে চলুন
- স্বাস্থ্যকর জীবনধারা জীবাণুমুক্ত থাকতে সাহায্য করে
- খাদ্য ও জল সুরক্ষিত রাখা জীবাণুমুক্ত থাকতে সাহায্য করে
- জীবাণুমুক্ত থাকতে পানির সঠিক ব্যবহার
- ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পরিচ্ছন্ন রাখা
- শেষকথাঃ হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এবং জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায়
হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এবং জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায়
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হলো হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা। সহজ এই প্রক্রিয়াটি কেবল একটি অভ্যাস নয় এটি বহু মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান চাবিকাঠি। আমাদের চারপাশে থাকা অগণিত জীবাণু ও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যা খালি চোখে দেখা যায় না তা মূলত হাতের মাধ্যমেই শরীরে প্রবেশ করে। এই কারণে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম জানা এবং তা নিয়মিত মেনে চলা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক। কার্যকরভাবে হাত পরিষ্কার করতে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে এই প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা উচিত যেন নখের নিচ পর্যন্ত কোনো জীবাণু লুকিয়ে থাকতে না পারে।
জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায় অনুসরণ করে আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে পারি। এই উপায়গুলি দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট অভ্যাস যা সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। শুধু অসুস্থতার সময় নয় বরং সারাবছরই এই স্বাস্থ্যবিধিগুলি মেনে চলা উচিত। বিশেষত জনসমাগমপূর্ণ স্থানে বা দূষিত বস্তু স্পর্শ করার পর অবিলম্বে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসারে হাত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এই নিয়মের প্রতি সামান্যতম অবহেলাও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার জোর দেন যে সাবান ও জল ব্যবহার করে হাত ধোয়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের চেয়েও বেশি কার্যকর। স্যানিটাইজার কেবল সাময়িকভাবে কাজ করে কিন্তু সাবান ও জল ময়লা এবং চর্বির আস্তরণে লুকিয়ে থাকা জীবাণুগুলিকে পুরোপুরি ধুয়ে ফেলতে সক্ষম। বিশেষ করে যখন হাতে দৃশ্যমান ময়লা লেগে থাকে তখন হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা অপরিহার্য। এই পদ্ধতিটি আয়ত্ত করা কোনো কঠিন কাজ নয় কেবল একটু মনোযোগ এবং সচেতনতার প্রয়োজন।
জীবাণুমুক্ত থাকতে সঠিক সময় হাত ধোয়া
আমরা কখন হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করি তা এর কার্যকারিতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভুল সময়ে হাত ধোয়া হলে তার কোনো মূল্য থাকে না আর সঠিক সময়ে ধুলে রোগ প্রতিরোধের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। খাবার তৈরি বা পরিবেশন করার আগে এবং খাওয়ার ঠিক আগে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি কারণ এই সময়ে হাতের জীবাণু সরাসরি খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। খাদ্যজনিত অসুস্থতা যেমন ডায়রিয়া বা পেটের সংক্রমণের প্রধান কারণই হলো অপরিস্কার হাত। টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম মেনে পরিষ্কার করতে হবে কারণ এই স্থানটি ই কোলাই
এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার প্রধান উৎস। একইভাবে অসুস্থ মানুষ বিশেষ করে সর্দি-কাশি বা ফ্লু-তে আক্রান্ত রোগীর সেবা করার আগে ও পরে হাত পরিষ্কার করা জরুরি। এতে জীবাণু সংক্রমণ একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমে যায়। অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে এটি এক মৌলিক পদক্ষেপ। এছাড়াও বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার পর বা কোনো সাধারণ স্থান যেমন পাবলিক পরিবহন হাসপাতালের কিউ বা বাজারের ব্যাগ স্পর্শ করার পরেও হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই সমস্ত স্থানগুলোতে অজস্র জীবাণু লুকিয়ে থাকে যা আমরা অজান্তেই হাতে
তুলে নিই। এই সচেতনতা শুধুমাত্র নিজের জন্য নয় বরং পরিবারের অন্যান্য সদস্য বিশেষ করে ছোট শিশু ও বয়স্কদের সুরক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গৃহপালিত পশুপাখিকে স্পর্শ করার পরেও হাত ধোয়া প্রয়োজন। প্রাণীর পশম বা মলমূত্র থেকেও কিছু নির্দিষ্ট রোগজীবাণু মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে। সুতরাং সঠিক সময়ে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম প্রয়োগ করার মাধ্যমেই আমরা আমাদের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত করতে পারি। এই সময়ের জ্ঞানই স্বাস্থ্যের রক্ষাকবচ।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত থাকা
যদিও সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা শ্রেষ্ঠ কিন্তু সব সময় জলের সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে স্যানিটাইজার শুধুমাত্র তখনই কাজ করবে যখন তাতে কমপক্ষে ৬০% অ্যালকোহল থাকবে। অ্যালকোহল জীবাণুকে মেরে ফেলে তবে তা ময়লা বা চর্বি দূর করতে পারে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পদ্ধতিও সহজ। হাতের তালুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যানিটাইজার নিন এবং
তা হাতে লাগিয়ে পুরোপুরি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত দুই হাতে ভালোভাবে ঘষুন। স্যানিটাইজার প্রয়োগের সময় আঙ্গুলের ফাঁক নখের নিচ এবং কব্জির অংশগুলিও কভার করতে হবে। এটি জরুরি যখন আপনি বাইরে আছেন এবং হঠাৎ করে কিছু স্পর্শ করেছেন বা খাবারের আগে দ্রুত জীবাণুমুক্ত হতে চান। স্যানিটাইজারের সুবিধা হলো এর বহনযোগ্যতা এবং ব্যবহারের দ্রুততা। এটি ছোট বোতলে ভরে ব্যাগে বা পকেটে সহজেই রাখা যায় এবং প্রয়োজনের সময় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা যায়।
তবে যদি হাত দৃশ্যমানভাবে নোংরা বা তৈলাক্ত থাকে তবে স্যানিটাইজার ব্যবহারে খুব বেশি লাভ হয় না সেক্ষেত্রে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করাই অপরিহার্য। স্যানিটাইজার কেবল জরুরি অবস্থার জন্য রাখা উচিত। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার সময় এটি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা এবং কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করা উচিত। এটির অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের শুষ্কতা বাড়াতে পারে। তাই যখন সাবান ও জলের সহজলভ্যতা থাকে তখন অবশ্যই হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
মুখ চোখ ও নাক স্পর্শ না করে জীবাণুমুক্ত থাকা
জীবাণুমুক্ত থাকার অন্যতম সহজ উপায় হলো হাত দিয়ে মুখ চোখ ও নাক স্পর্শ না করা। এই তিনটি অঙ্গ আমাদের শরীরের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। আমরা যখন কোনো দূষিত জিনিস স্পর্শ করি তখন সেই জীবাণুগুলো হাতে লেগে থাকে এবং এই তিন অঙ্গের মাধ্যমে সহজেই আমাদের শ্বাসতন্ত্র বা পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। বহু ফ্লু সর্দি এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণ এভাবেই ছড়ায়। এই অভ্যাসটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কারণ আমরা প্রায়শই অজান্তেই মুখে হাত দিয়ে থাকি। তাই এই বিষয়ে সচেতনতা
বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে যখন আপনি বাইরে বা জনাকীর্ণ স্থানে থাকেন তখন এটি কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত। মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতা কমানোর মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। যদি মুখ স্পর্শ করতেই হয় তাহলে নিশ্চিত করুন যে আপনি তার আগেই হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেছেন। কিছুক্ষণ পর পরই সচেতনভাবে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চললে হাত মোটামুটি পরিষ্কার থাকবে এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখে হাত দিলেও
সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। নখ ছোট রাখাও এই বিষয়ে সহায়ক কারণ নখের নিচে জীবাণু বেশি জমে থাকে। এই অভ্যাসটি নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য একটি নীরব কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী কৌশল। মুখমণ্ডল স্পর্শ করার এই অভ্যাসটি ত্যাগ করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে পারেন। নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিন যাতে কোনো অবস্থাতেই হাতে স্পর্শ করা না হয়।
জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য হাঁচি কাশির সঠিক পদ্ধতি
জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য কেবল নিজের হাত পরিষ্কার রাখাই যথেষ্ট নয় অন্যরাও যেন আমাদের থেকে সংক্রমিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হাঁচি কাশির সময় জীবাণুগুলি ক্ষুদ্র জলকণার মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে যা দ্রুত অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে। তাই হাঁচি কাশির একটি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। হাঁচি বা কাশির সময় মুখ ও নাক টিস্যু দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যু সঙ্গে সঙ্গে ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলে দিন। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনার জীবাণুগুলো অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়বে না। যদি আশেপাশে টিস্যু না থাকে তবে অবশ্যই কনুই বা বাহু ব্যবহার করুন মুখ ঢাকার জন্য। কখনোই হাত ব্যবহার করবেন না কারণ হাত দিয়েই
আমরা সবচেয়ে বেশি জিনিস স্পর্শ করি। হাত বা কনুই ব্যবহারের পরে যত দ্রুত সম্ভব হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম মেনে আপনার হাত পরিষ্কার করুন। এই নিয়মটি কেবল আপনার নিজের জন্য নয় এটি অন্যদের প্রতি আপনার দায়িত্বশীলতাও প্রকাশ করে। অসুস্থতার সময় এই নিয়মটি মেনে চলা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিকে 'শ্বাস-প্রশ্বাসের শিষ্টাচার' বলা হয় যা জনস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি অনুসরণ করার মাধ্যমে আমরা ফ্লু সাধারণ সর্দি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য রোগের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। হাঁচি কাশির সঠিক পদ্ধতি মানা আসলে জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা জীবাণুমুক্ত থাকার একটি ব্যাপক ধারণা যার মধ্যে নিয়মিত হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম পালন করা ছাড়াও আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত। আমাদের আশেপাশে থাকা জিনিসপত্রের পরিচ্ছন্নতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেসব পৃষ্ঠে আমরা ঘন ঘন হাত দিই যেমন দরজার হাতল সুইচ বোর্ড রিমোট কন্ট্রোল টেবিলের উপরিভাগ সেগুলোকে নিয়মিত জীবাণুনাশক বা পরিষ্কারক দিয়ে মুছতে হবে। বাসা বা কর্মক্ষেত্রের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে সেখানে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি হ্রাস পায়। বিশেষ
করে রান্নাঘর এবং বাথরুমের পরিচ্ছন্নতার দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন কারণ এই দুটি স্থানেই জীবাণু দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার এই অভ্যাসটি নিয়মিতভাবে করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের পরিচ্ছন্নতাও জরুরি। আপনার তোয়ালে বিছানার চাদর এবং পোশাক নিয়মিত ধোয়া উচিত। ভিজে তোয়ালে বা কাপড় জীবাণু ও ছত্রাকের জন্ম
দিতে পারে তাই এগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার স্থানে রাখা উচিত। পরিচ্ছন্নতা একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া যা প্রতিদিন মেনে চলতে হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয় এটি ভেতরের সুস্থতার প্রতিচ্ছবি। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা জীবাণু সংক্রমণ এবং রোগের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। এটি ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য একটি প্রয়োজনীয় কাজ।
জীবাণুমুক্ত থাকতে দূষিত বস্তু এড়িয়ে চলুন
জীবাণুমুক্ত থাকতে হলে কিছু দূষিত বস্তু বা স্থানকে এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। উদাহরণস্বরূপ প্রকাশ্যে থাকা আবর্জনার পাত্র ভিজে মেঝে বা জনসাধারণের ব্যবহৃত কোনো অপরিষ্কার পৃষ্ঠ সরাসরি স্পর্শ করা উচিত নয়। যদি এমন কিছু স্পর্শ করতে হয় তবে সঙ্গে সঙ্গে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। জনসাধারণের ব্যবহৃত স্থান যেমন গণপরিবহণের হ্যান্ডেল এটিএম মেশিনের বাটন বা শপিং কার্টের হাতল স্পর্শ করার পরে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এই স্থানগুলো অসংখ্য মানুষের স্পর্শে আসে ফলে এখানে জীবাণুর
পরিমাণ বেশি থাকতে পারে। সম্ভব হলে এগুলি স্পর্শ করার জন্য টিস্যু বা নিজের হাতের কনুই ব্যবহার করুন। বিশেষ করে অসুস্থ বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন তোয়ালে বা খাবার পাত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এই ধরনের জিনিসপত্র থেকে জীবাণু সহজেই আপনার শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখাই নিরাপদ। দূষিত বস্তু এড়িয়ে চলার এই সচেতনতা আপনার দৈনন্দিন জীবনে বহু স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। এটি আসলে রোগের উৎস থেকে নিজেকে দূরে রাখার একটি বুদ্ধিদীপ্ত উপায়।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা জীবাণুমুক্ত থাকতে সাহায্য করে
জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য কেবল বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতাই যথেষ্ট নয় শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও শক্তিশালী হওয়া জরুরি। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এই অভ্যন্তরীণ শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ঘুমের ঘাটতি শরীরকে দুর্বল করে দেয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভিত্তি। প্রচুর ফলমূল সবজি এবং পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন। ভিটামিন সি এবং ডি সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
খাদ্য তালিকায় যেন কোনো কৃত্রিম উপাদান না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। নিয়মিত শরীরচর্চা করাও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় যা রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোকে শরীরের বিভিন্ন অংশে দ্রুত পৌঁছাতে সাহায্য করে। নিয়মিত শরীরচর্চা মানসিক চাপও কমায় যা পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা আপনাকে কেবল রোগের হাত থেকে বাঁচায় না এটি আপনার জীবনযাত্রার মানও উন্নত করে। সঠিক হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এর সাথে এই অভ্যাসগুলো যুক্ত হলে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
খাদ্য ও জল সুরক্ষিত রাখা জীবাণুমুক্ত থাকতে সাহায্য করে
জীবাণুমুক্ত থাকার ক্ষেত্রে খাদ্য ও জলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি কারণ খাদ্যবাহিত রোগগুলি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। রান্না করার আগে এবং খাবার পরিবেশনের আগে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। কাঁচা মাংস ও সবজি যেন একসাথে মেশানো না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। খাবার সবসময় সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করা উচিত যাতে তার ভেতরে থাকা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলি মারা যায়। রান্না করা খাবার যেন বেশি সময় ধরে ঘরের তাপমাত্রায় না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে কারণ এতে জীবাণু দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে।
-
আরো পড়ুনঃ হাড় শক্ত ও মজবুত করতে কিছু উপকারি উপায়
অবশিষ্ট খাবার দ্রুত ফ্রিজে রাখা বা ফেলে দেওয়া উচিত। পানীয় জল সবসময় পরিষ্কার ও নিরাপদ হতে হবে। জল ফুটিয়ে বা ফিল্টার ব্যবহার করে বিশুদ্ধ করা উচিত। দূষিত জল পান করলে ডায়রিয়া কলেরা বা টাইফয়েডের মতো গুরুতর রোগ হতে পারে। তাই জলের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। খাবার ও জলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত বাসনপত্র এবং কাটিং বোর্ডগুলিও নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। এই সতর্কতাগুলি মেনে চললে আমরা খাদ্য ও জলবাহিত রোগগুলি থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।
জীবাণুমুক্ত থাকতে পানির সঠিক ব্যবহার
পানি অমূল্য সম্পদ এবং হাত ধোয়ার সময় এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের পরিবেশের প্রতি একটি দায়িত্ব। যদিও হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চলতে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয় তবুও আমরা সামান্য সচেতনতার মাধ্যমে জলের অপচয় রোধ করতে পারি। হাত ভেজানোর পর সাবান মাখার সময় জলের ট্যাপ বন্ধ করে দিন। সাবান দিয়ে হাত ঘষার ২০ সেকেন্ড বা তারও বেশি সময় ধরে জল অপচয় করা থেকে বিরত থাকুন। শুধুমাত্র সাবান ধোয়ার সময় পুনরায় ট্যাপ চালু করুন। এই সহজ অভ্যাসটি দৈনিক প্রচুর পরিমাণে জল বাঁচাতে পারে।
জল অপচয় রোধের পাশাপাশি নিশ্চিত করুন যে হাত ধোয়ার জন্য ব্যবহৃত জল পরিষ্কার। অপরিষ্কার বা দূষিত জল দিয়ে হাত ধুলে হাত পরিষ্কার হওয়ার বদলে আরও বেশি জীবাণুযুক্ত হতে পারে। তাই সর্বদা পরিষ্কার চলমান জল ব্যবহার করা উচিত। পানির সঠিক ব্যবহার আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য উভয়কেই সুরক্ষিত রাখে। এটি একটি দায়িত্বশীল আচরণ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলা উচিত। হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে এই সামান্য সচেতনতা অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পরিচ্ছন্ন রাখা
ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন মোবাইল ফোন ওয়ালেট চশমা এবং চাবি নিয়মিত পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। এই বস্তুগুলো আমরা দিনের বেলায় বারবার স্পর্শ করি এবং এগুলো সহজেই জীবাণু ও ভাইরাস বহন করতে পারে। মোবাইল ফোন যেহেতু আমরা মুখের কাছে নিয়ে আসি তাই এর পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মোবাইল ফোন পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ স্যানিটাইজিং ওয়াইপ বা সামান্য অ্যালকোহল মিশ্রিত পরিষ্কারক ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যেন তরল পদার্থ ফোনের ভেতরে প্রবেশ না করে। এছাড়া ওয়ালেট এবং চাবিগুলিও মাঝে মাঝে মুছে নেওয়া উচিত।
এই অভ্যাসগুলি জীবাণুর বিস্তার রোধে সহায়ক। এছাড়াও ব্যক্তিগত ব্যবহারের তোয়ালে বা গামছা নিয়মিত পরিবর্তন করা এবং তা ভালোভাবে শুকিয়ে রাখা উচিত। এই সমস্ত ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এর সুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানো যায়। আমরা যতই হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করি না কেন যদি আমাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র দূষিত থাকে তবে সংক্রমণ আবার ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই জিনিসগুলোর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সার্বিক জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
শেষকথাঃ হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম এবং জীবাণুমুক্ত থাকার সহজ কিছু উপায়
সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা একটি প্রাথমিক ভিত্তি। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে কেবল হাত ধোয়া নয় বরং কখন কিভাবে এবং কী কী সহায়ক অভ্যাস মেনে চলতে হবে। ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে সঠিকভাবে হাত ধোয়া নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং হাঁচি কাশির নিয়ম মানা সুস্থ জীবনের প্রধান চাবিকাঠি। আমরা দেখেছি সঠিক সময়ে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম প্রয়োগ করার গুরুত্ব। অপরিষ্কার হাত আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই মুখ স্পর্শ না করার কৌশল খাদ্য ও জলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার সতর্কতা এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখার অভ্যাসগুলি মেনে চলতে হবে। এই সহজ অভ্যাসগুলি সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে। সবশেষে বলা যায় জীবাণুমুক্ত থাকার এই সহজ উপায়গুলি অনুসরণ করে আমরা এক স্বাস্থ্যকর সমাজ ও ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।



ডেইলি মিক্স24 এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url